মানব-অবয়বের আবরণে,
আমার অন্তরাত্মা সৃজীত হয়েছিল মানবী রূপেই।
সৃজনকর্তার হয়ত ছিল
কোনো সুপ্ত বাসনা!
আমার ভাগ্যলিপি লিপিবদ্ধকরণকালে !
নিজেকে সৃজীত করতাম
রূপকথার রাজকুমারীর চরিত্রে।
অনবরত; পলে পলে।
অন্তরে ও বাহিরে।
সুপ্ত বাসনা নিয়ে–
কোনো এক রূপকথার রাজকুমারের,
সুপ্তি আসত প্রতি নিশীথে,
মানবের খাঁচায় বন্দী
এই মানবীর কারাগারে।
সময় নায়কের কঠিন বাহুডোরে আবদ্ধা
সমাজ নায়িকার মনে ছিল কুটিলতা।
নিয়ে সাথে বিরূপ বন্ধুর পরিস্থিতি
আর বিদ্রপের করাল গ্রাস।
রুক্ষ এই মরুভূমির জীবনে,
পেয়েছিলাম এক শীতল ছায়া,
এক মনোরম মরূদ্যানের মত।
এক মহাপুরুষের আবরণে আবৃত
আরেক মানবের অবয়বে।
আমার আজন্ম লালিত,
সুপ্ত বাসনাকে পূরণ করতেই
হয়ত এসেছিল সেই মহাপুরুষ!
আমার দ্বিতীয় সৃজনকর্তা রূপে!
আমার ভাগ্যলিপিকে পুনর্লিপিবদ্ধকরণকালে ,
কি ছিল তার সুপ্ত বাসনা?
আজও অজানা আমার।
ভেবেছিলাম, শৈশবে শোনা রূপকথা,
পরিবর্তিত হবে আমার জীবনকথায়!
আমার এই পরিবর্তিত ভাগ্যলিপি,
আর এই দেহের খাঁচার মত!
আত্মপ্রকাশ করেছি আজ,
মানব থেকে মানবীতে!
দেহ-মন নিয়ে এক মানবীর।
তবে হয়েছে কি আত্মার প্রকাশ !
হতে পেরেছি কি এক সফল মানবী আজও!
সফল হয়েছে শুধু অন্তঃসারশূন্য এক অস্ত্রপচার।
নির্বোধ মানবী আমি,
বুঝেছি আজ, যা বুঝিনি সেদিন—
দেহেরই মত পরিবর্তন আসে,
মানবের মননেরও।
নির্বোধ মানবী আমি,
সেদিন ভুলেছিলাম মোহগ্রস্ততায়।
অমোঘ, অপরিবর্তনীয় সেই সত্যি যে—
প্রেমপর্বের পরবর্তীতে জীবনে আসে পরিবারপর্ব।
পুরুষের, মহাপুরুষেরও।
মানবের খাঁচার শাস্তি থেকে
মুক্তিপ্রাপ্ত মানবীরা,
মানবাধিকার পায় বৃহন্নলারূপে।
পুত্রবধূ রূপে স্বীকৃতির স্বপ্ন থেকে যায় অধরাই।
মা হয়ে প্রস্ফুটিত হতে অপারগ যে!
নির্বোধ মানবী আমি,
হয়েছি মানবী যে আজ।
মেনে নিতে শিখেছি যে–
জীবন রূপকথা কখনোই নয়।।
বুঝেছি আজ মানবী হওয়ার পর,
এই কাহিনী হয়তো বা
সব মানবীকেই মেনে নিতে হয়!