ekta 1

ফোনটা একনাগাড়ে বেজে চলেছে, অলোক এখনো বাড়ি ফেরেনি।  প্রচন্ড অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঈশিতাকে উঠতে হলো।  কোনোরকমে ঘুমচোখে হাওয়াই চটিজোড়া পায়ে গলিয়ে শোবার ঘর থেকে বেরিয়ে হলঘরে এসে দাঁড়ালো। 

ফোনটা বেজে চলেছে, ঈশিতা তুললো, ‘হ্যালো’ 

হ্যা রে, দিদি বলছি। শোন Richard আজ কলকাতায় আসছে, দশ ঘন্টা ওয়েটিং, তারপর কলকাতা থেকে মুম্বাই চলে যাবে।  তোর জন্যে একটা গিফট পাঠিয়েছি, দেখা করিস – ITC সোনার বাংলায় থাকবে।

ঈশিতা – হ্যালো, হ্যালো …. হ্যা কি বলছিস। জামাইবাবু আসছে, একা। আমি পারবো না, আমি ইংরেজি বলবো কি করে ? 

ধ্যাৎ, ওভাবে ইংরেজি বলা যায় নাকি ? না না ওভাবে হয় না, আমি কখনও ইংরেজিতে ওভাবে কথা বলিনি। 

অলোক মনে হয় যেতে পারবে না।  এখনও ফেরেনি, ভোর রাত হবে, বড়ো একটা ক্যাটারিং আছে বেহালাতে।

দেখি দাঁড়া, এখনই কিছু বলতে পারছি না।  কটায় আসছে বললি, সকাল আটটা, ইন্ডিয়া টাইম? দেখছি।

ফোন ছেড়ে ঈশিতা দেওয়াল ঘড়িটার দিকে তাকায় রাত দুটো বাজে। শোবার ঘরে ফিরে যাবার সময় খেয়াল হয় যে ব্রা পরেনি। সাধারণত আলোক বাড়িতে থাকলে ঈশিতা অন্তর্বাস ছাড়া শোয় না। 

শোবার ঘরে গিয়ে নাইটির নিচে ব্রা আর সায়া পরে নিলো ঈশিতা, হালকা নীল রঙের নাইট ল্যাম্পটা জ্বলছিল। পায়ে পায়ে বিছানায় গিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো, দোতলার খোলা জানালা দিয়ে চাঁদের মিষ্টি আলো এসে পড়ছে গায়ের ওপরে। কিছু ছোট ছোট ঘটনা মনে পড়তে লাগলো।   

ঘুম ভেঙে ঈশিতা দেখলো অলোক অন্য দিকে কাত হয়ে ঘুমোচ্ছে। অদ্ভুত মানুষ এই অলোক, বড়ো বেশী সন্মান করে বৌকে। নতুন সূর্যের নরম আলোয় কি সুন্দর দেখাচ্ছে ওকে, বড্ড ইচ্ছা করছে জড়িয়ে ধরতে। পর মুহূর্তে মনে পড়ে গেলো ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪, ভোর বেলার কথা।  অলোক কথা দিয়েছিলো কোনোদিন আর ঈশিতাকে ছোঁবে না।  ও বলেছিল – কলি তুমি ভাবলে কি করে জোর করে তোমার সঙ্গে শুতে চাইব আমি? আমি আর তোমাকে কোনদিন স্পর্শ করবো না, আমি ছোটলোক নই। তারপর থেকে অলোক আর কোনদিন ‘কলি’ বলে ডাকেনি। 

উঠে পড়লো ঈশিতা, সকালের টুকিটাকি কাজ গুলো করে, স্নান সেরে তৈরী হয়ে নিলো। অলক তখনো ঘুমোচ্ছে, ঈশিতা ডাকলো – ‘শুনছো? কি গো শুনছো? ঘুমচোখে তাকালো অলোক, কি হয়েছে? এতো সকালে বেরোচ্ছ নাকি? ঈশিতা জানালো – জামাইবাবু আসছে, আট ঘন্টার জন্য; মুম্বাই যাবে কলকাতা থেকে। সোনার বাংলা যাচ্ছি দেখা করতে। অলোক পাশ ফিরে বললো, বাসে যেও না। একটা উবের নিয়ে নিও।  আলমারি থেকে হাজার তিনেক টাকা নিয়ে যাও। রোদ লাগিও না।     

উবের অর্ডার করে ঈশিতা রাস্তায় এসে দাঁড়ালো। একটা আগুনরঙা শাড়ি পড়েছে, কালো পাড়।  টেরাকোটার হার আর দুল। বাইরে বেরোতেই কিছু পাড়ার ছেলে গায়ে পড়ে কথা বলতে এলো। শ্যামল এগিয়ে এসে বললো, বৌদি কোথায় যাচ্ছ? খুব সুন্দর দেখাচ্ছে তোমায়? এই একটু বেরোচ্ছি। ঈশিতা পদ্মপুকুর মোড়ে এসে ছেলেগুলোর নজরের আড়ালে দাঁড়ালো। ট্যাক্সি বলছে পাঁচ মিনিট। 

ঈশিতা জানে সে যথেষ্ট সুন্দরী। একটা আকর্ষণ আছে তার চেহারায়। একা স্নানঘরে নিজেকে দেখে, নিজেই নিজের প্রেমে পরে যায়। ছোটোখাটো চেহারা, মেদহীন টানটান গড়ন। নিখুঁত সুডোল স্তন দুটো, মাঝে মাঝে আলতো করে ছুঁয়ে দেখে। প্রথম যেদিন চুমু খেয়েছিলো, অলোক বলেছিলো ওর চোখ দুটো নাকি চঞ্চল হরিণীর মতো। যে কোনো পুরুষকে পাগল করে দেয়। 

সে দিনটা ছিল বুধবার, ঈশিতা মাধ্যমিক দেবে। বাবা ও মা গিয়েছিলো আশ্রমে। দিদি পড়ছিলো ওপরের ঘরে। পড়ার সময় হঠাৎ লোডশেডিং হয়ে যায়। অলোক উঠে গিয়ে কামড়ে ধরেছিলো ঈশিতার ঠোঁটদুটো। ককিয়ে উঠেছিল ঈশিতা, বলেছিলো অলোকদা লাগছে ছাড়ো, দিদি এসে পড়বে। অলোক বলেছিলো ‘তুই আমার কালো হরিণী’, অলোক অনভস্ত ভাবে ছুয়েঁ দেখেছিলো ওর পুরো শরীরটা।  শান্ত হয়ে সমর্পন করেছিল ঈশিতা। সেদিন বুঝেছিলো ভালোবাসার পুরুষের থেকে ব্যাথা পাওয়ার মধ্যে লুকিয়ে আছে এক আশ্চর্য আদিমতা।     

ম্যাডাম সোনার বাংলা যাবেন, ট্যাক্সিটা কখন এসে দাঁড়িয়েছে খেয়াল হয়নি। সোনার বাংলার রিসেপশন এ গিয়ে রিসেপসনিস্ট মেয়েটিকে ঈশিতা বললো, সিঙ্গাপুর থেকে এসেছেন Dr Richard Jones, আমি একটু দেখা করবো । মেয়েটি কার সঙ্গে ইংরেজিতে কি কথা বললো, তারপর বললো আপনি একটু বসুন।

ঈশিতা সোফাতে বসলো, খুব নরম গদিটা। তলপেটে একটা চিনচিনে ব্যাথা হচ্ছে। আজ ঈশিতা একটু আনমনা, নার্ভাস লাগছে। খুব ছোট মনে হচ্ছে নিজেকে।  কিন্তু এরকম তো সাধারণত হয় না।  ঈশিতা সোফায় এলিয়ে পড়ে।   

২৪ ডিসেম্বর ২০১৪ বিয়ে হয়েছিল ঈশিতা চ্যাটার্জি আর অলোক দত্তের। ওদের দুজনের ৭ বছরের প্রেম। অলোকদা দিদির ক্লাস ফ্রেন্ড, টিউশন পড়াতো ঈশিতাকে।  

বিয়ের দিন খুব খুশি হয়েছিল ঈশিতা। অলোকদাকে কি সুন্দর দেখতে, কি দারুন ডিবেট করে, কবিতা লেখে । দত্ত পরিবারের প্রতিপত্তি ও বনেদিয়ানার কথা পাড়ার সবাই জানতো। নটা রাজ্যে ওদের হোটেলে আর ক্যাটারিংয়ের ব্যবসা। ঈশিতা ভগবানকে বলেছিলো অলোকদার সঙ্গে বিয়ে হলে সে আর জীবনে কিছু চাইবে না। 

ফুলসজ্জার রাতভর দুজনে খুঁজেছিলো দুজনের শরীরকে। তারপর কখন যেন ঘুমিয়ে পরে ক্লান্ত দুটো প্রাণ। পরেরদিন খুব ভোরে ঘুম ভাঙ্গে ঈশিতার, মৃদু ঝগড়ার শব্দে। চাতালে দিদাইয়ের ঘরটা ভেতর থেকে বন্ধ। কোনো রকমে পা উঁচু করে জানালার ঘষা কাঁচে চোখ রাখে ঈশিতা। অস্পষ্ট আলোয় দেখতে পায় অলোককে, মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে আছে, মাথাটা একটা মেয়েমানুষের কোলে রাখা। মেয়েটি জানালার দিকে পিঠ দিয়ে পা ঝুলিয়ে খাটে বসে আছে। দুজনেই নগ্ন। চাপা হিংস্র গলায় মেয়েটা বলে ওঠে, তুমিই তো বলেছিলে ‘কুঁচোযুগ শোভিত মুক্তাহারে আমাকে সারাজীবন দেখতে চাও‘। কি নেই এই নমিতার মধ্যে যা ঈশিতা তোমাকে দিতে পারবে? বলো, তোমায় বলতে হবে। ম্যাডাম, ও ম্যাডাম, ঈশিতার সম্বিৎ ফেরে। ধড়াচুড়ো পরা হোটেলের লোকটা বলে – আপনি ৮ তলায় চলে যান please, রুম নম্বর ৮০৭৩।         

ঈশিতা নিজেকে গুছিয়ে উঠে দাঁড়ায়, লিফটে উঠে ৮ তলায়। ৮০৭৩ ঘরটা খুঁজে নিয়ে একটু দাঁড়ায়, তারপর দরজায় টোকা দেয়।  Wait a sec, রিচার্ড দরজা খোলে।  Come on in, please. ঈশিতা ঘরে ঢোকে, খাটের সামনে রাখা চেয়ারটায় বসে।  

রিচার্ড একটা প্যাকেট এনে দেয় ঈশিতার হাতে। Please tell your sister that I have given you the packet. Or else she will ask a thousand questions. হা হা হা হা, রিচার্ড হাসতে থাকে। Do you want some chilled juice? ঈশিতা মাথা নাড়ে। রিচার্ড এক গ্লাস অরেঞ্জ জুস এনে দেয় ঈশিতাকে, নিজে একটা ড্রিংক নিয়ে এসে বসে ঈশিতার সামনে।  So, how are you black beauty? You look stunning. হঠাৎ যেন ঈশিতার কি হয়।  চকিতে উঠে দাঁড়িয়ে বুকের আঁচলটা সরিয়ে বুকে চেপে ধরে রিচার্ড এর মুখটা। প্রথমটা হতচকিত হয়ে গেলেও, প্রকৃতির কাছে হার মানে পৌরুষ। রিচার্ড দুহাত দিয়ে খুঁজে নেয় ঈশিতাকে, ঈশিতার উন্মুক্ত বুক যেন শুষে নেয় সবকটা চুম্বন। কিছুক্ষন পরে রিচার্ডের চুল ধরে তাকে সরিয়ে দেয় ঈশিতা, ঠিক যেমন করে পরাজিত সৈনিক কে অবহেলা করে চরম শাস্তি দেয় বিজয়ী সেনাপতি। তার খোলা উর্ধাঙ্গে যেন যুদ্ধ জয়ের তিলক। রিচার্ডের চোখে বিস্ময় , হতভম্ব, জড়ভরতের মত চেয়ে থাকে ঈশিতার দিকে।

দ্রুত নিজেকে ঠিক করে নেয় ঈশিতা। একটা উবের বুক করে প্যাকেটটা নিয়ে হোটেলের নিচে নেমে আসে। ঈশিতা কাঁপছে, বুকটা হাপরের মত  উঠছে আর নামছে।  ট্যাক্সিতে উঠে ফোন করে অলোককে, হ্যালো ‘সুমিতার মা’ কি আছে এখন বাড়িতে? ওকে চলে যেতে বল। আমি বলছি তাই, তোমার সঙ্গে কথা আছে। অলোক যেন একটু ভয় পায়। এ এক অচেনা ঈশিতা, ভীষণ অন্যরকম। বাইপাস থেকে এন্টালি পদ্মপুকুর যেন পৃথিবীর দীর্ঘতম রাস্তা। পথ যেন শেষই হয় না। বাড়ি পৌঁছেই কোনোরকমে তালা খুলে দৌড়ে ওঠে ঈশিতা। গিয়ে ঢোকে নিজের বেডরুমে। তারপর ঝাঁপিয়ে পরে আলোকের ওপর। 

কি করছো  ঈশিতা, কি করছো – অলোক আরো কিছু বলতে চায়। পারে না, এক পুরুষ জেগে ওঠে, এক স্ত্রীলোকের শরীরের আগুনে। পাঁচ বছরের ক্ষুধার্ত ভালোবাসা বাঁধ মানে না, ঈশিতার শরীরের প্রতিটি গ্রন্থি পেতে চায় কর্ষণ যন্ত্রনা। শিহরিত দুটি প্রাণীকে যেন গিলে খেতে চায় আদিমতম চাহিদা। অলোকের কানের কাছে ঈশিতা বলে ওঠে, একটা পুরোনো হিসেব বাকি ছিল, মিটে গেছে। আজ থেকে আমি শুধু কলি, তোমার কৃষ্ণ কলি । অলোকের শোনার সময় নেই, সে যেতে ব্যস্ত ‘কলির’ গভীর থেকে গভীরে। দেবেভ্যঃ হাভিয়াম, বহতু প্রজনন।

© 2020 Golpo cloud (গল্প cloud)

Golpo cloud, Cardiff, United Kingdom, CF24 1RE
E – golpocloud@gmail.com 

error: Content is protected !!