এক ফালি স্বপ্ন

ঘ্যাঁচ করে ব্রেক কষল প্রমিত।  আরেকটু হলেই মেয়েটাকে পিষে দিত ওর গাড়িটা। সামনের ক্রসিং-এ গান বাজছে, ‘যদি তারে নাই চিনি গো –’  

আঃ, দেখে রাস্তা পার হবেন তো!” আচমকা কেউ যদি এভাবে গাড়ির সামনে চলে আসে, তাহলে কার না রাগ ধরে? ভাগ্যিস সিগন্যালটা পরে গেছিল! নাহলে শিওর হাজত বাস হয়ে যেত! মানুষ তো রাস্তার লোকের দোষ দেখবে না! যত দোষ নন্দ ঘোষ ওই ড্রাইভারের! তাই রাগের চোটে খিঁচিয়ে উঠে গাড়ির জানালা দিয়ে মাথা বের করল প্রমিত।

বাইরে তখন টিপটিপে বৃষ্টি। ডাইনে ভিক্টোরিয়া ডানা কাটা পরীর মত ঝলমল করছে! বাঁয়ে কলকাতার সাংস্কৃতিক পিঠস্থান নন্দন। সামনের উড়াল পুলটার গা ঘেঁষে থাকা লাইটের সারির দিকে তাকালে মনে হবে যেন স্বর্গের কোনও অপ্সরার গলায় পরানো রয়েছে মুক্তোর মালা। রংবেরঙয়ের আলো ভিক্টোরিয়া চত্তরকে করে তুলেছে আরও মোহময়ী। গা শির শির করা ঠান্ডা বাতাসে যেন ভালবাসার ছোঁয়া। মান অভিমানের গল্প। কত মেয়ে যে তাদের মনের মানুষের বুকে মাথা রেখে অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে শান্তি কুড়িয়ে চলেছে তার হিসেব কারো কাছে নেই।

মন মাতাল করা এই অষ্টাদশী সুন্দরী কলকাতাকে দেখে চোখ ফেরানো যায় না। মনটা ভাসতে ভাসতে উড়ে যেতে চায় দূরে ওই মেঘেদের দেশে। ফিরে আসতে মন চায় না। অজান্তে কখন যেন সে’দেশে পারি দিয়েছিল প্রমিত। কিন্তু বাদ সাধল এই মেয়েটা। মুহূর্তের মধ্যে মনের ভেতর তৈরী হওয়া জলছবিটা মিলিয়ে যেতে রাগ চেপে গেল ওর। কিন্তু মাথাটা জানালা দিয়ে বের করতেই মনের ভেতর জ্বলতে থাকা আগুনে কে যেন জল ঢেলে দিল। চোখ দুটো আটকে গেল মাত্র দশ গজের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার মুখের ওপর। প্রাণপণ চেষ্টা করেও নজর সরাতে পারছিল না। কয়েক মুহূর্ত পর চোখ দুটো ধীরে ধীরে মুখ থেকে সরে নীচে নেমে এসে পা ছুঁয়ে আবার মুখের ওপর এসে স্থির হল।   

দুধে আলতায় গায়ের রঙ। কালোর মধ্যে রং করা লাল আর হলদেটে খয়রি চুলগুলো কান জোড়াকে ঢেকে কাঁধে এসে মিশেছে। যত্ন নেওয়া ভুরু জোড়ার নীচে মাসকারা লাগানো পাগল করা চোখের চাউনিতে হারিয়ে যেতে চাইবে সব পুরুষ। তারই মধ্য থেকে উঠে আসা ছোট্ট টিকালো নাকটা মেয়েটার ব্যাক্তিত্বকে একটা আলাদা মাত্রা দিয়েছে। হালকা লিপস্টিক লাগানো ঠোঁট জোড়া যেন শিল্পীর তুলির শেষ ছোঁয়া। কালো ব্লাউজের সাথে রানি কালারের শাড়ির আঁচলটা বাঁ কাঁধ থেকে পিঠ বেড়িয়ে ডান কোমড়ের কাছে নেমে এসে ডান হাতের মুঠোতে মিশে ওর আভিজাত্যকে আরও ওজনদার করে তুলেছে।

দেখে চালাতে পারেন না? সিগন্যাল পরে যেতেও এত জোরে গাড়ি চালাচ্ছেন কেন?”

নিজের অজান্তেই মেয়েটার রূপ সাগরে ডুব দিয়েছিল প্রমিত। এবার কড়া প্রশ্নটায় ঘোর কাটল। মেয়েটার কথাগুলো রাগের না অনুযোগের, সেটা বুঝে ওঠার আগেই ওর গলার স্বর সরাসরি ধাক্কা মারল প্রমিতের বুকের মাঝে।

কী হাঁ করে দেখছেন?”

ইয়ে না মানে, মেয়েটার ঝাঁঝানিতে আমতা আমতা করে প্রমিত বলল, “আই অ্যাম সরি।“ যতটা তোড়জোর করে কোমর বেঁধে নেমেছিল, ততটাই গুছিয়ে পিছিয়ে এল বেচারা।

ইটস ওকে।“ প্রমিতের উত্তরে যেন যুদ্ধ জয়ের স্বাদ পেল মেয়েটা। মুহূর্তের মধ্যে চড়া গলা খাদে নেমে এল। “ আরেকটু হলেই বিপদে পরতেন। বুঝলেন?”

বাধ্য ছেলের মত মাথা নাড়ল প্রমিত। শেষ কথাটা বলে এগোনোর জন্য পা বাড়িয়েছে মেয়েটা, এমন সময় অজান্তেই প্রমিতের মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল, “এক্সকিউজ মি!”

ইয়েস?” ঘুরে দাঁড়াল মেয়েটা।

বার দুয়ের ঢোঁক গিলে প্রমিত বলল, “বলছিলাম যে, যদি কিছু মনে না করেন –“

লিফট দেবেন নাকি?” প্রমিতকে কথা শেষ করতে না দিয়ে সটান জিজ্ঞাসা করল মেয়েটা।

স্পষ্ট কথাটা এত সহজে মেয়েটার মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসতে অপ্রস্তুত হয়ে গেল প্রমিত। মেয়েটা তখন এগিয়ে এসে বলল, “আই হ্যাভ মাই ওন কার।“ তারপর মুখ দিয়ে বার দুয়েক চুক চুক শব্দ করে বলল, “একটা সুন্দরী মেয়ের সঙ্গ হারালেন! ভেরি স্যাড। এবার হেসে বলল, আমরা কিন্তু চা খেয়ে কিছুটা সময় কাটাতে পারি।“

যেন একটা ঘোরের মধ্যে ছিল প্রমিত। অন্য সময় হলে ওর আঁতে ঘা লাগত। অথচ মেয়েটা মুখ থেকে কথাটা ফেলা মাত্রই প্রমিত ওর কালো হুন্ডাই আই টোয়েন্টি’টা পার্ক করে সোজা গিয়ে ঢুকল নন্দনে।

মেয়েটার সাথে হাঁটতে বেশ লাগছিল প্রমিতের। মনের মধ্যেকার উথাল পাথাল অবস্থাটা কোথায় যেন উধাও হয়ে গেছে ততক্ষনে । দিনের পর দিন, বছরের পর বছর, সকাল থেকে রাত, কম্পানির দায়িত্ব পালন করতে করতে জীবনটাকে ভুলেই গেছে প্রমিত। শনি রবি ছুটি থাকে বটে। কিন্তু রবিবার দুপুর থেকেই মন খারাপ হতে শুরু করে। সোমবার থেকে আবার গিয়ে বসতে হবে সেই ঝাঁ চকচকে নরকে! সুন্দর সুন্দর পোশাক পরা কুৎসিত মনের মানুষগুলো যেন অসহ্য হয়ে উঠছে দিনের পর দিন। সেই সাড়ে নটায় অফিস ঢুকে ল্যাপটপ খুলে বসে পরা। একের পর এক ইমেলের উত্তর করতে করতে ঠিক করে ফেলা দিনপঞ্জি। ঘড়ি ধরে কাজ, মিনিটে মিনিটে ফোন কল।

নিজেও কখন যেন কম্পিউটার হয়ে গেছে প্রমিত। দুপুর সাড়ে বারোটায় লাঞ্চ। সময় বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে ছুঁয়ে আটটা হতে সেদিনকার মত ছুটি। আরও একটা দিন জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া। কিন্তু এই কষ্ট ও কারো সাথে ভাগ করতে পারে না। আবার সহ্যও হয় না। রাত নটা নাগাদ প্রতিদিনই নন্দন চত্তরে গাড়ি দাঁড় করিয়ে মনের ভেতরে জমে থাকা স্বপ্নটাকে জাগিয়ে তোলে। তারপর বাড়ি ফিরে বের করে নেয় খাতাটা। বারোটা একটা বেজে যায়। চলতে থাকে লেখা। লিখতে লিখতে কত স্বপ্ন দেখে। পাঠক সমাজে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ওর লেখা। তারপর সেই লেখা থেকে তৈরী হচ্ছে ছবি। লিখতে লিখতে কখন যে চোখ জুড়ে আসে বুঝতে পারে না। যখন চোখ খোলে, তখন ভোরের আলো ওকে মনে করিয়ে দেয়, আরও একটা অভিশপ্ত দিনের জন্য তৈরী হবার কথা।

এ’জীবন আর সহ্য করতে পারছে না প্রমিত। দম যেন বন্ধ হয়ে আসতে চাইছে ওর। অথচ এর থেকে রেহাই নেই। লেখালিখি, অভিনয় নিয়ে মেতে উঠলে সংসার চলবে কী করে। বুকের ভেতরটা জ্বলে যায়। তাহলে কি চাকর হয়েই সারাটা জীবন কাটাতে হবে? মনের ইচ্ছের কি কোনও দাম নেই? জীবন তো একটাই। সেটা কি নিজের মত করে বাঁচা যায় না? মন যা চায় কেন সে তা করতে পারে না? পৃথিবীর গতিপথ তো বদলায় নি। তাহলে ওর জীবন এভাবে বদলে যাচ্ছে কেন? আর ভাবতে পারে না প্রমিত।

মনের মধ্যে ঝড় নিয়ে মেয়েটার সাথে হাঁটতে হাঁটতে বাঁধানো বট গাছটার তলায় এসে দাঁড়াল প্রমিত।  তখনও ঝিরঝিরে বৃষ্টিটা হয়ে চলেছে। সেটাকে গ্রাহ্য করে না ওরা।

এখানে বসা যেতে পারে।“

আবার যেন সেতারের সুর কানে ঢুকল প্রমিতের। লজ্জা লজ্জা করে পাশে বসল মেয়েটার। বেশ কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থাকার পর মেয়েটাই প্রথম মুখ খুলল।

এমন একজন অচেনা মহিলার সাথে সময় কাটাচ্ছেন, আপনি বিবাহিত?” উত্তরে প্রমিত মাথা ঝোঁকালে পর মেয়েটা আবার জিজ্ঞাসা করল, “বউ জানতে পারলে?”

উত্তরে চুপ করে রইল প্রমিত। মনের ভেতর তৈরী হওয়া উত্তরটা যেন মেয়েটা পড়ে ফেলল। খিল খিল করে হেসে উঠে বলল, “একটু সময় কাটানোতে মনে হয় দোষ নেই, তাই না?” তারপর হাসির রেসটা সামান্য টেনে নিয়ে বলল, “আমার নাম, ধাম জানতে ইচ্ছে করছে না? জানতে ইচ্ছে করছে না, একটা অচেনা মানুষের সাথে আমি সময় কাটাতে রাজি হয়ে গেলাম কেন?” তারপর ওকে চমকে দিয়ে জিজ্ঞাসা করল, “কী ভাবছেন? আমি দেহ ব্যবসা করি?”

প্রমিত তখন থতমত খেয়ে বলল, “না না, তা কেন?”

তখন মার্লবোরোর একটা প্যাকেট প্রমিতের দিকে এগিয়ে দিতে প্রমিত না করায় মেয়েটা সেটা থেকে একটা সিগারেট নিয়ে ঠোঁটের ফাঁকে গুঁজে নিয়ে বলল, “আপনি তাই ভাবছিলেন। আই নো। বাট রিয়েলি, আমি ওসব কিছু করি না।“

তখন কোনও রকমে একটা ঢোঁক গিলে প্রমিত জিজ্ঞাসা করল, “আপনি কী করেন?”

মেয়েটা ততক্ষণে সিগারেট ধরিয়ে ফেলেছে। এবার দুটো ধোঁয়ার রিং ছেড়ে বলল, “আমার নাম রেজিনা। রেজিনা চ্যাটার্জি। একটা অ্যাড এজেন্সি চালাই। তাছাড়া একটা ম্যাগাজিনও বের করি। মান্থলি।“ প্রমিতের চাউনিটা দেখতে দেখতে বদলে যাচ্ছিল। রেজিনা তখন বলল, “এবার সিনেমাতে টাকা ঢালবো ভাবছি।“

কথাটা শুনে চোখ বড় বড় হয়ে গেল প্রমিতের। রেজিনা তখন বলল, “কলকাতার বিগ শট কম্পানির অ্যাড আমরা তৈরি করি। ইনকাম খারাপ হয় না। তাই ভাবছি – আচ্ছা, আপনার পরিচয়টাতো জানা হল না?”

প্রমিত ব্যানার্জি।“ নাম ছাড়া আর কিছু বলার ইচ্ছে ওর ছিল না। রোজকার ওই কচকচানির কথা বলতে মন চায় না। তাও ভদ্রতার খাতিরে বলল।

তাতে বেশ কিছুক্ষণ ওর দিকে চেয়ে থেকে রেজিনা বলল, “খুব একঘেয়ে জীবন আপনার, তাই না?”

কথাটা যে প্রমিতের মনের কতটা ভেতরে গিয়ে ধাক্কা মারল, সেটা আন্দাজ করতে পারল না রেজিনা। চায়ের ভাঁড়ে চুমুক মেরে বলতে থাকল –

আমিও আপনার মত প্রাইভেটে চাকরি করতাম। কিন্তু গতে বাঁধা জীবনে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। টাকাকে “পয়সা” শুনতে শুনতে, নববর্ষতে হ্যাপি নিউ ইয়ার শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে গেছিলাম। আরও রাগ উঠত ওই কাকের গায়ে ময়ূরের পালক লাগানো মেয়েগুলোকে দেখে। আরে বাবা বাংলা স্কুলে পড়েছিস। রেসপেক্ট দ্যাট! কিন্তু না। এক বছর আগে মা’কে হয়ত বলত, ভাত দাও। আর এখন শ্বশুর বাড়ি গিয়ে বরকে বলে রাইস লাগবে? দুপুর বেলা অগোছালো বিছানায় বসে পেয়ারা চেবাতো। আর এখন সে গোয়াভা খায়! ইডিয়ট। আমি বলি, ক্যান ইউ স্পিক লাইক আ লরেটো অর লা মার্টস পাস আউট? যদি না পারো, দেন বিশ্রি ইংরিজি বলে অন্যের কান খারাপ কোরো না। বাংলাটা বাংলার মত করে বলো। ইট উইল সাউন্ড নাইস!”

এর মধ্যে সিগারেটে আরও দুটো টান মেরে মেয়েটা বলল, “কী ভাবছেন? আই অ্যাম ফ্রম লরেটো।“ তারপর বলল, “যেদিন ছুটি চাই, সেদিন পাই না। যেদিন পাই, সেদিন চাই না। কেন? জীবন আমার না ওদের? বেঁচে থাকার অর্থটাকে শুধুমাত্র “অর্থ” করে তুলে লাভ কী বলুন তো? কোনও রকমে টেনে টেনে দিন চলছিল। দেখেই বুঝতে পারছেন আমি কেমন। সেই রকমই একদিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে একটা বোল্ড ডিসিশন নিয়েই ফেললাম। দিলাম চাকরিটা ছেড়ে। ভাবলাম যা করব, নিজে করব। আর কারও চাকর হয়ে থাকব না। বিয়ে করেছিলাম। টেঁকে নি। বাবার সাথে আছি। বাবার একটা ছাপাখানা আছে। তাতেই বের করতে শুরু করলাম ম্যাগাজিনটা। হিট করে গেল। পাশাপাশি খুলে ফেললাম একটা অ্যাড এজেন্সি। জানপ্রান লাগিয়ে খাটলাম। ওটাও দাঁড়িয়ে গেল।“

সিগারেটের শেষ টানটা দিয়ে ক্যারামের স্ট্রাইকারের মত ছুঁড়ে ফেলে রেজিনা বলল, “এখন আমি নিজেই নিজের মালিক।“  

রেজিনার কথাগুলো শুনতে শুনতে নেতিয়ে পরা মনটা অনেকটাই সতেজ হয়ে উঠেছিল প্রমিতের। অনুভব করল রেজিনার সাথে পরিচয় হওয়ার সময় ওর বুকে যে একটা চিনচিনে ভাললাগার ব্যথা তৈরী হয়েছিল, সেটা আর নেই। অনুভূতিটা বদলে গেছে। উল্টে ওকে এখন বন্ধু বলেই মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে, এই তো সে। যার জন্য ও এত দিন অপেক্ষা করে রয়েছে। স্ত্রী বা প্রেমিকা নয়। বন্ধু, শুধুই বন্ধু। যে ওর মনের কথা বুঝবে। ওকে পথ দেখাবে। ওর স্বপ্নকে আরও রঙিন করে তুলবে। ভাবতে ভাবতে কেঁদে ফেলতে ইচ্ছে করছিল প্রমিতের। এমন সময় রেজিনার কথায় ঘোর কাটল ওর।

এই জীবন ভাল লাগে আপনার?”

কোনও উত্তর না দিয়ে প্রমিত তখন ব্যাগ থেকে ওর লেখার খাতাটা বের করে রেজিনার হাতে দিল।

এটা কী?” অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল রেজিনা।

প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে প্রমিত বলল, “এটা আমি। আমার মন। আমার মনের কথা।“

একটার পর একটা পাতা ওলটাতে ওলটাতে চোখজোড়া চিক চিক করে উঠল রেজিনার। এবার খাতা থেকে মুখ তুলে উত্তজনার বশে ফস করে আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে বলল, আপনি কী, তা আপনি জানেন? প্রমিত চুপ করে রইল। রেজিনা বলল, এগুলো চেন বন্ধ করে ব্যাগের মধ্যে ফেলে রাখার জন্য নয়। এগুলোকে পৃথিবীর আলো দেখান। মানুষকে বলুন আপনার কথা।  

কোনও রকমে চোখের জলকে আটকে রেখে প্রমিত বলল, “আমি সিনেমার স্ক্রিপ্ট লেখাও শিখেছি রেজিনা।“

কয়েক মুহূর্ত এক দৃষ্টে চেয়ে থেকে ব্যাগ থেকে একটা কার্ড বের করে প্রমিতের দিকে এগিয়ে দিয়ে রেজিনা বলল, “কাল আপনি একবার আমার সাথে দেখা করুন তো।“

কাঁপা কাঁপা গলায় প্রমিত তখন বলল, “আমি কি পারব?”

ফর্সা নরম হাতগুলো দিয়ে প্রমিতের ডান হাতটা চেপে ধরে রেজিনা বলল, “আপনি যা পারতেন তা আপনি করেছেন। এবার আমি কী পারি সেটা দেখি।“

হঠাৎ করে এত কিছু আশা করেনি প্রমিত। আবেগ প্রকাশ করতেও যেন ভুলে গেছিল। একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকাল।

কী দেখছেন?” জিজ্ঞাসা করল রেজিনা।

অপলকে আকাশটাকে দেখতে দেখতে প্রমিত বলল, “এখানে আকাশটা কত বড়! অফিস থেকে খুব ছোট লাগে।“

ওদিকে তখন বৃষ্টি থেমে গেছে। তারাগুলো জোনাকির মত জ্বলজ্বল করছে। একফালি চাঁদও উকি মারছে পূব আকাশে।

 

সমাপ্ত

© 2020 Golpo cloud (গল্প cloud)

Golpo cloud, Cardiff, United Kingdom, CF24 1RE
E – golpocloud@gmail.com 

error: Content is protected !!