Washing Machine

মা আর বাবা বসে আছেন। সামনের টেবিলে চা আর বিস্কুট  – শীতের  রোদ পীঠে পড়েছে। বারান্দার একপাশে  একটা চন্দ্রমল্লিকার গাছ। মফঃস্বলের শেষ  বিকেল। মেয়ে ফিরে আসতে সাধারনত আটটা বাজে। মেয়ে বড় শহরে চাকরি করে- মাসে মাসে অনেক  টাকা ঘরে আনে। কয়েকমাস আগে একটা দেওয়ালে লাগানো মস্তবড়ো টিভি কিনেছে। আগেরটা ছোটো টেবিলের উপর বসে থাকতো। এখন মানুর মার বাড়িতে টুলে বসে থাকে। দেওয়ালের টিভিতে সিরিয়ালের নায়িকা থেকে সুচিত্রা উত্তম, সবাইকেই বড় দেখায়। ঘরটা দশ বাই বারো,তাই  কেমন যেন  হালকা রঙের  দেখায় ছবি গুলো। ছোটোটাতে অনেক ঘন দেখাতো। চায়ের কাপডিসগুলো ও নতুন- বড় কাপদুটোতে আবার বাবা আর মার হাসিমাখা ছবি মেয়ে বড় শহর থেকে করিয়ে এনেছে। তাছাড়াও নিজের আর বাবা মার শোবার ঘরে ঠান্ডা মেশিন লাগিয়েছে। রাতে এখন ঘুম খুব ভালো হয়।বেরবার আগে মেয়ের  সাজগোজে আজকাল চল্লিশ মিনিটের একটু বেশি লাগে।  মার্কেটিং এর কাজতো। খুব টিপটপ হয়ে যেতে হয়। দুটো চড়াই এসে চন্দ্রমল্লিকার টবটার পাশে বসেছে। ওরা মাঝে  মাঝে  বাবা, মার দিকে চাইছে। চিনির দানা, বিস্কুটের গুঁড়ো ভালোবাসে ওরা। বিকেল মরে এলো।   

 

ট্রেনের দূরত্বের পঞ্চাশ মিনিট দূরে বড় শহর। সেই শহরের স্টেশন থেকে আরো কুড়ি মিনিট তফাতে একটা বারো বাই বারোর ঘরে মেয়ে বিছানায় উঠে বসলো। আজ একজন হয়ে গেছে  আর একজন হলেই ওয়াশিং মেশিন এর এই মাসের কিস্তির টাকাটা হাতে এসে যায়। মনে হয় আর চল্লিশ মিনিট।  তারপরেই ছুটি – আজকের মতো ছুটি।  কাল আবার শুরু হবে ট্রেনের চাকার শব্দ…. বড়কাকা, মেজোকাকা, বড়কাকা, মেজোকাকা, বড়কাকা, মেজোকাকা….

error: Content is protected !!