কার্ডিফ থেকে প্রকাশিত, গ্লোবাল বাংলা সাহিত্য পত্রিকা (অনলাইন)

কফি হাউসের সেই আড্ডাটা …

Coffee House 3A

পাঠক বন্ধুরা 

আশাকরি আপনারা সবাই যথাসম্ভব সুস্থ ও কুশলে আছেন।  আপনাদের ভালোবাসা ও অনুপ্রেরণায় ‘গল্প cloud’ তার শৈশবকে উপভোগ করছে। 

‘বাঙালি’ হল এমন এক জাতি, সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র মনুষ্য গোষ্ঠী, যাদের মননে’র কিছু বিশেষ চাহিদা সর্বজনবিদিত, সামাজিক, অর্থনৈতিক, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট নির্বিশেষে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় – সন্ধ্যে বেলায় কাজের শেষে আড্ডা; তা সে হোক না পাড়ার চায়ের দোকানে, ঘোষেদের মস্ত দালানের চাতালে সামনাসামনি আড্ডা, অথবা গুগল মিট এ  কলকাতার পঞ্চসায়র ও যুক্তরাজ্যের কার্ডিফে বসবাসকারী দুই বাঙালি বন্ধুর ভার্চুয়াল আড্ডা। এই ‘আড্ডা’ ব্যাপারটি বাঙালির অস্তিত্ত্ববোধের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে।

আড্ডা’ নামক সামাজিক প্রক্রিয়াটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রমান দেয় বাঙালি-মননে’র চাহিদার । এর বিষয়বস্তু কখনও শিল্পকলা, সাহিত্য, কখনও বা দেশীয় অথবা আন্তর্জাতিক সিনেমা, আরও অনেক অনেক কিছু। এই আড্ডায় যোগদানের সাধারণ শর্ত – ‘আড্ডা মারার ইচ্ছা’। 

addaসমাজের বিভিন্ন অবস্থানের মানুষেরা একে অন্যের সঙ্গে অবাধে মত বিনিময় করেন এই আড্ডার মাধ্যমে।  কিছু চিরাচরিত বিষয় আছে , যেমন ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান, সুনীল-শক্তি, ইলিশ-চিংড়ি, যা যুগের পর যুগ ধরে বিভিন্ন প্রজন্মের বাঙালির কাছে  সমান আকর্ষণীয়।  আমার মত এক দ্রষ্টার দৃষ্টিকোণ থেকে এই ‘আড্ডা’ গণতন্ত্র ও সহনশীলতার প্রতিভূ, এক অতি উৎকৃষ্ট জাতিসত্তার পরিচায়ক। প্রাক স্বাধীনতা সময় থেকে 

Coffee Houseকলকাতা কফি হাউসহল এমনই এক প্রতিষ্ঠান যা সারা পৃথিবীর আপামর বাঙালির আড্ডার পীঠস্থান। ১৯৪২ সালে তৎকালীন কফি বোর্ড এর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয় কফি সেন্টার, ১৯৪৭ সালে এর নামকরণ হয় কফি হাউস। বিভিন্ন দিকপাল বাঙালি বুদ্ধিজীবী যথা, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সত্যজিৎ রায়, চিদানন্দ দাশগুপ্ত, ঋত্বিক ঘটক, অমর্ত্য সেন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, এবং আমাদের মতো অসংখ্য বাঙালি তাদের জীবনের কোন না কোন সময়কে রিলেট করেছেন, করেন ও করবেন কফি হাউস এর সঙ্গে। কখন যেন সবার অলোখ্যে, নিঃশব্দে কফি হাউস হয়ে ওঠে আম জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। হয়ত একরাশ মিষ্টি ভালোবাসা, অথবা কিছু ব্যর্থতা নয়তো বহু পুরোনো ফিকে হয়ে যাওয়া মনে পড়া‘, কফি হাউস থেকে যাবে আমাদের জীবনে  

এহেন কফি হাউস করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের নিমিত্তে তার ঝাঁপ বন্ধ করে দেয় ২০ মার্চ ২০২০।  কফি হাউস এর বন্ধ হওয়ায় যেন কোথাও তাল কেটে যায় বাঙালি জীবনে    কেমন যেন একটা অপূর্ণতার উপলব্ধি , ‘ভালোবাসাথেকে দূরে থাকার এক অব্যক্ত দুঃখ।  অবশেষে ১০৩ দিন বন্ধ থাকার পরে গত  ২ রা জুলাই আবার দোর খুলেছে কফি হাউস, সোশাল ডিস্ট্যান্সিঙ ও আরো অন্যান্য বলবৎ বিধি মেনে। কফি হাউসের রি-ওপেনিং যেন চলমান বাঙালি সমাজের প্রতিচ্ছবি।  যা মনে করিয়ে দেয় মুক্তমনা, উদারমনস্ক এক নগরের কথা, আমাদের প্রিয় কলকাতা; আর এগিয়ে থাকা এক জনগোষ্ঠী, বাঙালির কথা 

Coffee House 2A

গত তিন মাসে, এই লক ডাউন এর সময়ে, গল্প cloud বেড়ে উঠেছে  তার প্রিয় পাঠকদের প্রশ্রয়ে, আদরে   ভালোবাসায়    ভারতবর্ষের তথা বাংলার বিভিন্ন জায়গা, আমেরিকা, ইউরোপ , গ্রেট ব্রিটেন থেকে লেখক ও পাঠকগণ স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে স্বেচ্ছায় লেখা পাঠিয়েছেন, পড়েছেন ও  প্রিয়জনদের পড়িয়েছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকা বাঙালি জীবনের প্রতিফলন ঘটেছে গল্প cloud  এ।  আমাদের সাহিত্য পত্রিকার এনালিটিক্স ছুঁতে চলেছে ৯০০০ হিট, আমাদের ফেস বুক লাইক ছাড়িয়ে গেছে ১০০০। 

আমরা কৃতজ্ঞ সব লেখকদের কাছে যারা তাদের লেখা পাঠিয়েছেন, পাঠকদের কাছে যারা গল্প cloud  পড়েছেন ও প্রিয়জনদের পড়িয়েছেন। 

আমরা কৃতজ্ঞ আমাদের সম্পাদকমন্ডলীর কাছে। 

আমরা কৃতজ্ঞ কিরণনামক এক চ্যারিট্যাবল সংস্থার কাছে, আমাদের দৈনন্দিন সাপোর্ট দেওয়ার জন্য। (www.kiran.org.uk )

আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই Red Panda Digital Creations  কে, আমাদের ওয়েবসাইট মেনটেইন করার জন্য   (https://www.redpandadigitalcreations.com/)

আসুন সকলে  মিলে বাংলাকে ভালোবেসে, বাঙালি হয়ে গর্ববোধ করি আর গল্প cloud  কে আরও অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাই। 

আমাদের সোনার বাংলা আমরা তোমায় ভালোবাসি 

অনির্বাণ মুখোপাধ্যায়  

error: Content is protected !!