fasir pore 1

–” উঃ কষ্ট। ফাঁসির দড়িটা যখন গলায় চেপে বসল জিভটা আপনা থেকেই বেরিয়ে এলো। যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠতে গেলাম–

–” মা মাগো খুব কষ্ট । ” না মা এগিয়ে এলো না ঠিক আগের মতো। 

গ্রামের বাড়ির ছোট্ট দোচালা ঘরে শীতের সময়  খুব ঠান্ডা লাগলে গলাটা বসে যেত যখন অনেক সময় মা পরম যত্নে নুন জল গরম করে বাটিটা সামনে রেখে  পিঠের ওপর আলতো হাতের ছোঁয়া রেখে বলতো–” যা দেখি গারগেল করে আয় । গলা ব্যথাটা কমবে। “ 

না আজ আর মা আসেনি বিশ্বাস করুন আপনারা আজ মা আসেনি। বলেনি –” বাছা তোর গলায় ব্যথা পাচ্ছিস আমি আছি তো তোর সব কষ্ট দূর করে দেবো। কোন ব্যথা তোকে ছুঁতে পারবেনা।”,,,,,,,, আসলে কী জানেন মা আমাকে আর ভালোবাসেনা আগের মতো। ঘৃণা করে । শুধুই ঘৃণা। ঘৃণা করে সেই সেদিন থেকে যেদিন ভরা আদালতে প্রমাণিত হল আমি একটি নাবালিকাকে  ধর্ষণ করে প্রমাণ লোপাট করতে তার গলায় বসিয়ে দিয়ে ছিলাম ফাঁস। টানা টানা  চোখ দুটোয় ফুটে উঠেছিল মেয়েটার বাঁচার তীব্র আকাঙ্খা । চিৎকার করার ব্যর্থ প্রয়াসে  ছটফট করতে করতে এক সময়ে স্থির হয়ে গিয়েছিল মেয়েটা। জিভটা বেরিয়ে এসেছিল। বিশ্বাস করুন  ঠিক যেমন আমার বেরিয়ে এলো আজ ফাঁসির কয়েক সেকেন্ড পরে। উঃ কী যন্ত্রণা। আজ বুঝলাম বিশ্বাস করুন আজ বুঝলাম কী অসহ্য যন্ত্রণা ওই মেয়েটা সহ্য করেছিল সেদিন আমার পৈশাচিক অত্যাচারে। ওর মৃত্যুও আমার বিবেককে জাগাতে পারেনি তখন। ওর মৃত নগ্ন শরীরটা দেখে আমার পুনরায় কাম জেগেছিল। আরো একবার তীব্র যৌন লালসা মিটিয়েছিলাম আকন্ঠ মদ্য পান করে। উঃ শান্তি । তারপর পরিতৃপ্ত  শরীর আমার মেয়েটাকে টানতে টানতে নিয়ে  গিয়েছিল অন্ধকার পথ ধরে। সঙ্গে নিয়ে ছিলাম একটি বড় বোতলের কেরোসিন তেল । দেশলাই তো পকেটেই থাকে। নিরিবিলি স্থান দেখে একটি ঝোপের মধ্যে ওর গায়ে ঢেলে দিয়েছিলাম বোতল ভরা কেরোসিন তেল। একটি দেশলাই কাঠি জ্বালিয়ে তখনি ছুঁড়ে দিতেই দাউ দাউ করে জ্বলতে শুরু করেছিলো ওর দেহটা।

 পৈশাচিক আনন্দে আমার বুকের ভেতরটাতে কেমন যেন একটা অদ্ভুত অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছিল। যাক আর কোন প্রমাণ রইলো না ওই মেয়েটাকে ধর্ষণের ফেলেছিলাম স্বস্তির নিঃশ্বাস।,,,,, ,,,,,, 

হায় ঈশ্বর আমি ভুল ছিলাম । প্রমাণ যে মাতৃচক্ষুর কাছে অসহায় । আমার অন্তর্যামী আমার মা আমাকে ধরতে পেরে গেল সহজেই। আমার অপরাধী চোখমুখ তার কাছে ধরা পড়ে গেল। বিনা বাক্যব্যয়ে সে আমাকে টানতে টানতে নিয়ে গেল থানায়। তুলে দিল পুলিশের হাতে।,,,,,

 তারপর দীর্ঘ সাত বছর জেলের মধ্যেই আমার প্রহর গোনা। কবে কোন মুহূর্তে আমার জীবনে ঘনিয়ে আসবে কোন এক কাকভোর যখন গলায় মোটা দড়ির ফাঁসটা চেপে বসে জানান দেবে–” যে অন্যায় তুমি করেছ তার জন্য তোমার পুরস্কার । একটি নারীকে পৈশাচিক অত্যাচার করে তাকে হত্যা করার পর পুনরায় নিজের যৌন ক্ষিদে মেটানোর পুরস্কার ।” 

হ্যাঁ পুরস্কার পেলাম । আজ ফাঁসি হল আমার কিছু সময় আগে।কেন জানিনা ফাঁসির পর এই প্রথম আমার চোখ দুটি কাকে যেন খুঁজতে লাগল। জীবিত অবস্থায়  এই সাত বছর যাকে মেরে ফেলার জন্য এতটুকু অনুশোচনা করিনি। বরং মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বার বার আইনকে বুঝিয়েছি –” আমি এ কাজ করিনি। আমি নির্দোষ । ” আজ তাকেই খুঁজলো। হ্যাঁ এলো সে। দেখলাম তাকে। বিশ্বাস করুন দেখলাম তাকে। শরীরটা তার জ্বলছে। দাউ দাউ করে জ্বলছে আজও । কায়াহীন দেহটাতে তার চোখ দুটো শুধু বিস্ফারিত। সে চোখের দৃষ্টি বড় কঠিন।

 আমি সহ্য করতে পারছি না। চিৎকার করে উঠলাম—-” আমাকে তুমি ক্ষমা করো। যৌবণের উন্মাদনা আমাকে তোমার শরীর টুকু পাওয়ার জন্য পাগল করে তুলেছিল। আমি অপরাধ করে বসলাম। যে অপরাধ করলাম তার কোন ক্ষমা নেই আমি জানি। তবু পারলে আমাকে ক্ষমা কোরো । ” তার চোখ শান্ত হলো। জ্বলন্ত অগ্নি শিখার মধ্যে তার কালো কুঞ্চিত হয়ে যাওয়া মুখ মন্ডল ধীরে ধীরে  স্পষ্ট হলো । দেখলাম ওর ঠোঁটের প্রান্তে ক্ষীণ হাসির রেখা । ও হাসছে। ও হাসছে। কিন্তু  ও কী? ও হাসিতে যে ঘৃণা চরম ঘৃণা। চিৎকার করে উঠতে গেলাম — “আমাকে ঘৃণা করোনা।” পারলাম না গলার কাছে ব্যথা অনুভব করলাম । না আমার কন্ঠ রোধ হয়ে গিয়েছে। 

( নিতান্ত গল্প)

#সমাপ্ত

error: Content is protected !!