Jaggoseni

জানি,বালুচরে লিখে রাখা নাম

একটু পরেই মুছে যাবে ঢেউ এলে

তবুও তো লিখে রাখি,,

যাজ্ঞসেনী কি আসবে রিইউনিয়নে! আসলে কতদিন পর দেখা হবে বলত ! আচ্ছা ও কী ফেসবুকে নেই। কতভাবে ওকে ট্রাই করেছি। জানিস ওর খবর। ও কী আগের মতই প্রাণখোলা আছে। দেখা হলে ছুঁটে আসবে আগের মত। কি ভালই না ছিল দিনগুলো ! সময়ের হাতে কী আগুন থাকে!  পুড়িয়ে দেয় সব কিছু ! যাজ্ঞসেনী খবর কার কাছে পাবো বলত । কথাগুলো শুনে মনে হল রণজয় ড্রিঙ্ক করে আছে। পেটে জল পরলে দুঃখ গুলো কবিতা হয়ে বেরিয়ে আসে।  রণজয় অনেকক্ষণ ধরেই বকে যাচ্ছিল। ওর কথা শেষ হতেই বললাম  যাজ্ঞসেনীর সব খবর পাবি অরিন্দমের কাছে । সেদিন ফোন করেছিল । ও এখন সানফ্রান্সিসকো। কলেজের প্রফেসর । ও তো আসবেই বলেছে । ওই বলল  যাজ্ঞসেনী এখন নিউইয়র্ক। যাজ্ঞসেনীকে বলেছ  রিইউনিয়নের কথাটা। যাজ্ঞসেনী হ্যাঁ বা না কিছুই বলেনি। রণজয় বলল রাতুল শমীক শচীন ওরাও আসবে আমায় বলেছে ! রণজয় বলল যাজ্ঞসেনী কে  একটা গান করতে বলিস ! মনে পরে গেল কথাটা শমীক আর শচিন কে দেখতে ভাই ভাই আমরা নিজেদের ভিতর বলতাম ওরা নকুল সহদেব আর রাতুল ছিল ফিসক্যালি ভীম  আর আমায় ওরা বড়ভাই মানে যুধিষ্ঠির বলত। মনে মনে হেসে উঠলাম । তালে অর্জুন কে! এই প্রশ্নে রণজয় কেন  নীরব থাকত!  দেখতে দেখতে রিইউনিয়ন এসে গেল । অজিত বলল আপাতত কুড়ি জনের সঙ্গে যোগাযোগ করা গেছে । অজিতের  এসব ব্যাপারে হাতযশ আছে। সাংগঠনিক কাজ ভালই পারে । বাকি বন্ধুরা সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে । কেউ হয়ত ইহজগৎ ছেড়ে চলে গেছে । যাজ্ঞসেনী নবীনবরণে একটা গানটা করেছিল গিটারে । অরিন্দম আগে থেকে চিনত । ওই বলেছিল কলেজে দারুণ একটা মেয়ে ভর্তী হয়েছে  নাম যাজ্ঞসেনী ওয়েস্টার্ন গান জানে । যাজ্ঞসেনী  পরে বলেছিল গানটা   “জন ডেনভার এর “কান্ট্রি রোডস টেক মি হোম””। তারপর থেকেই আমরা পাঁচজন আর ও বন্ধু হলাম । কলেজেও সবাই বলত আমারা পাঁচজন ওর অশ্বারোহী ।  যাজ্ঞসেনী এয়ারপোর্ট থেকে ফোন করল । বলল” কি রে জয় সব ঠিকঠাক আছে তো!  তবে দেখা হচ্ছে কাল । আমার দারুণ আনন্দ হচ্ছে । অজিত দারুণ একটা কাজ করেছে বল ! ও না হলে সম্ভব হত না ! “এখানে  পা দিয়েই ওর মনে পরে গেল সব স্মৃতি। যাজ্ঞসেনীর মনের বাতিঘর ছুঁয়ে যাচ্ছে সব স্মৃতি। ওর চোখে জল চলে আসছে । কেন সময় এভাবে দ্রুত ছোটে। গঙ্গার দিক দিয়ে আসা হাওয়া ওর চুল উড়িয়ে নিচ্ছে । যাজ্ঞসেনী যে গানটা গাইবে মনে মনে গেয়ে নিল “’ আমি শুনেছি সেদিন তুমি নীল ঢেউয়ে চেপে নীল জল দিগন্ত ছুয়েঁ এসেছ,,,    আবার যেদিন যাবে আমাকেও সঙ্গে নিও,, বলো নেবে তো আমায়”। যে কুড়ি জন আমরা মিলন উৎসবে জড়ো হয়েছি  যাজ্ঞসেনী ছাড়া সবাই আগত । অজিত একটা প্রোগ্রাম কনডাক্ট করেছে । যাজ্ঞসেনী গাইবে । আমি একটু দূরে বসে ছিলাম। মন খারপাপের মেঘ কার ভিতরে না নেই!  তবুও তো সবাই ফ্লুরোসেন্ট হাসি মেখে নেয় ঠোঁটে । তবে আমি পারছি না কেন? । একটু আধতু লেখালিখি করি । তাই হয়ত ভাবনা চিন্তা গুলো গভীরে নিয়ে যায়। না সবতেই গল্পের রসদ খুঁজি !  না যাজ্ঞসেনীর প্রতি আমারও একটা সফট ফিলিং  ছিল, তাই ! যাজ্ঞসেনীর  সঙ্গে দেখা হবে  দীর্ঘ পচিশ বছর পর । ভেবেছিলাম যাজ্ঞসেনী হয়ত পালটে গেছে। কিন্তু এতটা ভাবিনি যে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত পোগ্রামটা ও একাই কনট্রোলে নিয়ে নেবে। গিটার নিয়ে আসবে সঙ্গে করে । উনিশ বছরের মত  লাফিয়ে  স্টেজে উঠে গান ধরবে ‘ আমি শুনেছি সেদিন তুমি নীল ঢেউয়ে চেপে,,, আমি তাকিয়ে থাকলাম । মনে হল  জীবনের পচিঁশ বছর কেউ যেন ডিলিট করে দিয়েছে । অনুষ্ঠান শেষে ও আমার কাছে  এল । বলল নিউইয়র্ক গেলি আমার ওখানে যেতে পারলি না । বলল তুই লেখক হয়ে যাবি বোঝা যাইনি । তোর বই আমি আমাজন থেকে নিই তো! । জানিস পুরীতে গেলে আমি বালুচরে লিখে রাখতাম তোদের নামগুলো । .  আর ঢেউ এলে মুছে যেত । জানতাম তবুও লিখে রাখতাম । আমি যাজ্ঞসেনির দিকে তাকিয়ে থাকলাম। তখনই ঘুমটা ভেঙে গেল । চাঁদের আলোয় চরাচর ভেসে যাচ্ছে। এতক্ষণ ধরে স্বপ্ন দেখছিলাম । সেরাতে আর ঘুম এল না।  মনে পড়ে গেল কলেজের দিনগুলো । মনে হল সেদিনের ঘটনা । যাজ্ঞসেনী ওয়েস্টার্ন গানের ভক্ত ছিল। ব্রায়ন এডামস ওর প্রিয় গায়ক। রণজয় ওকে প্রোপজ করেছিল। তবে ফিলিংস আমাদের সবারই একটা  ছিল। ভোরে মর্নিং ওয়ার্কে বেড়িয়ে অজিতকে ফোনে ধরলাম । যাজ্ঞসেনী আসছে তো! অজিত বলল মনে হয় যাজ্ঞসেনী আসবে না ! অজিত বলল অরিন্দম কে ফোন কর  ও হয়ত ডিটেলে বলতে পারবে । অরিন্দমকে ফোন করলাম । বললাম তুই যাজ্ঞসেনীর ব্যাপার কিছু জানিস ও কি আসবে !  অরিন্দম বলল যাজ্ঞসেনী বলেছে এটা সারপ্রাইজ থাক ।

অজিত ইডেন গার্ডেনের কাছে একটা কমিউনিটি হল বুক করেছিল। গিয়ে দেখি অজিত দারুণ আয়োজন করেছে। অজিত ফোন করেছে । যাজ্ঞসেনী এসেছে । ও বলছে ওকে যে পাঁচজন অশ্বারোহী ঘিরে থাকত তার এসে যদি নিয়ে যায় তবেই যাবে । অজিত বলল আমি তোদের পাঁচজনকে  ফরোয়ার্ড করে দিয়েছি। আমরা পাঁচজন যাজ্ঞসেনীর বাড়িতে পৌছে গেলাম । গিয়ে দেখি ওখানে একটা বহুতল হয়েছে। যাজ্ঞসেনী বাবার নাম জানিনা । কার নামে খুঁজব । রণজয় বলল  রিসেপসনে বললে বলে দেবে ল্যান্ডলর্ড কোন ফ্লোরে থাকে। আমরা যাজ্ঞসেনীর ফ্লাটে পৌছে গেলাম । নক করতে যে দরজা খুলে দিল তার দিকে তাকিয়ে আমরা সবাই ফিউজ হয়ে গেলাম। সামনে দাড়িয়ে উনিশ বছরের যাজ্ঞসেনী। মেয়েটি বলল আপনারাই তাহলে মায়ের পাঁচজন অশ্বারোহী । যাজ্ঞসেনী এসে দাঁড়িয়েছে নীল রঙের চুড়িদারে । কে বলবে চল্লিশ পেরলে মেয়েরা বুড়ি হয়ে যায়। আমরা পাঁচজন ভাষাহীন দাড়িয়ে আছি। যাজ্ঞসেনী বলল চল এরপর যেতে দেরি হয়ে যাবে । যাজ্ঞসেনী গিটারটা কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে এল । ওলা তে যেতে যেতে আমরা সবাই বললাম একটা গান গাইবি, অন্যরকম। যাজ্ঞসেনী গাইল “হয়েন ইউ  সে নাথিং এট অল”  আমরা সবাই তাল দিচ্ছি। রণজয় সামনে চুপচাপ বসে আছে । আমাদের ভিতর যে স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দ ওর ভিতর নেই । জানি আমরা কারণ টা । ওর ভিতর একটা পাপবোধ কাজ করছে । রণজয় যাজ্ঞসেনীকে  প্রোপজ করেছিল । যাজ্ঞসেনীর প্রত্যাখ্যান মন থেকে মেনে নিতে পারিনি আজও । যাজ্ঞসেনী বলেছিল তোরা পাঁচজন আমার অশ্বারোহী । তাই বলে আমি কিন্তু মহাভারতের যাজ্ঞসেনী নই। আর তুইও অর্জুন না। যাজ্ঞসেনীকে মাঝখানে রেখে আমরা এনট্রি নিলাম ।

error: Content is protected !!