prapti

সুজয় দিন ১০ হল আমেরিকা থেকে বহুদিন পর নিজের দেশে ফিরেছেন ছেলের সাথে। ফেরার পর থেকেই যেন একটু দুর্বল লাগছে। হতেই পারে। দুই দেশের আবহায়ায় অনেক পার্থক্য। হালকা জ্বর হল। ছেলেটা বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে জোর করেই ডক্টরের কাছে নিয়ে গেলো। চারিদিকে এত করোনা চলছে তাই ডক্টর করোনা টেস্ট করতে বললো। রাতে একটু শ্বাস কষ্ট মনে হল। সুজয় মনের জোর কিন্তু হারায় না। বাকি আর কোনো কষ্ট নেই। ২ দিন পর রিপোর্ট করোনা পজিটিভ এলো। ডক্টর বললেন , বাড়িতে থাকতে পারেন তবে সব কিছুই আলাদা করে করতে হবে। স্পেশাল যত্ন দরকার আর সময় মত সেবা। বাড়িটা তো ছোট, তাই আবার বাথরুম একটাই। কি করে ছেলের সাথে থাকবেন? আর ছেলে কতটাই বা যত্ন নিতে পারবেন? স্ত্রী তো গত হয়েছেন, ছেলের বিয়েও হয় নি। এমনিতেই এই lockdown এর জেরে সব কাজ তারা বাবা আর ছেলে মিলেই করছিল। অনেক টা জোর করেই সুজয় তাই কোয়ারান্টাইন হোম য়ে চলে এলো।

একটু কেমন কেমন লাগছে নতুন জায়গাতে। কিন্তু কিছু আর করারও ছিল না। তাই মানিয়ে নেবার চেষ্টা করতে লাগলো। প্রথম দিনটা পার হল।

দ্বিতীয় দিনটা অদ্ভুত রকম এলো। সব আশা আকাঙ্খা, এক মুহূর্তে যেন পূরণ হয়ে এলো। দুপুরে খাবার পর এক মাঝ বয়সি মহিলা এলো সেই হোম য়ে। দূর থেকে দেখে মনে হলো ভীষণ ভেঙ্গে পড়েছেন। উনার ঠাই হলো সুজনের পাশের বেডে। মহিলা গুনগুন করে কান্না করেই চলেছেন মুখ নিচু করে। নার্সরা অনেক বুঝাচ্ছেন, কিছু হবে না আপনার , আপনি মনের জোর রাখুন, আপনি ভালো হয়ে যাবেন ইত্যাদি। কিন্তু উনি কিছুতেই মুখ তুলছেন না। সুজনের বেশ কেমন যেন লাগতে লাগলো। তাই একটু কাছে গেলেন উনাকে বোঝাবেন ভেবে। অপরিচিত এক ব্যাক্তির আওয়াজ শুনে যেই মহিলা মুখ তুলেছেন , সুজন ” নীলা” বলে বলেউঠেছেন। তারপর সেই মহিলার কান্না একদম চুপ। বরং আনন্দে দুজনের গাল রঙিন হয়ে এলো। এতো কিছুর মধ্যেও যেন বুক ভরা আনন্দে দুজন নিশ্বাস নিতে লাগলো। নীলার  একমাত্র  মের বিয়ে হয়ে সে এখন বিদেশে থাকে। নীলার স্বামী অনেকদিন গত হোয়েছেন। বাড়িতে একাই থাকতেন তিনি। কাজের লোক ছিল, তার করোনা ধরা পড়েছে তাই উনার ও টেস্ট করা হয় এবং করোনা ধরা পড়ে। বাড়িতে কেউ নেই দেখাশোনা করার জন্য, মে বিদেশে তাই পাড়া পড়শীরা এই হোম য়ে নিয়ে এসেছেন। একসময় সুজন আর নীলা অভিন্ন হৃদয় বন্ধু ছিলেন। সুজন কাজ নিয়ে বিদেশে চলে যান, আর নীলা সংসার সামলান। কত সময় পেরিয়ে গিয়েছে। আজ মহামারীর মাঝে এক কোয়ারান্টিন হোম য়ে তাদের এই ভাবে দেখা হবে কেউ কোনোদিন ভাবেনি। সুজন চিরকাল খুব পজিটিভ মনের মানুষ, মনের জোর খুব। আর সেই মনের জোরেই চলতে লাগলো তাদের নতুন করে বেঁচে উঠার অভিযান। নীলাও নিজেকে সামলে নিয়েছেন সুজন কে কাছে পেয়ে। মহামারীর মাঝে পুরোনো বন্ধুকে এত কাছে পাওয়া যে আজ তাদের পরম প্রাপ্তি। জীবনকে তারা জয় যে করবেই এটাই তাদের অঙ্গীকার।

error: Content is protected !!