Ujbuk

“আরে ইগনোর করবি, এক কান দিয়ে ঢোকাবি আর অন্য কান দিয়ে বার করবি”

 

পিয়া বললো মিতুন কে। একমাত্র মিতুনই জানে যে এটা বলা সোজা কিন্তু করা শিবের অসাধ্য! আরে জ্ঞান তো সে নিজেও একে তাকে দিয়ে থাকে যখন তখন বেশ ভারিক্কি চালেই, কিন্তু নিজের বেলা?? তখন অগতির গতি এই পিয়া অথবা শিউলি।পিয়া কে তো কিছু নালিশ করলেই বলবে, “তোর বাপু সবেতেই কমপ্লেইন, এই যে তোকে দেশ বিদেশ ঘোরাতে নিয়ে যাচ্ছে , কজন মেয়ের কপালে জোটে শুনি? অভাব তো রাখেনি কিছুরই!” সত্যি তো কিসের অভাব তার? ইগনোর মিতুন ইগনোর!

 

ঘটেও তার জীবনে চাট্টি উৎপটাং ব্যাপার স্যাপার আর ওমনি বাই ওয়ান গেট ওয়ান ফ্রীর মতো দেবেশের তীক্ষ্ম বাক্যবাণ ধেয়ে আসে। গতমাসেরই ঘটনা, সব সময়ের কাজের বউ শ্যামা সব শাড়ী ঝেঁপে দিলো, কি বুদ্ধি মাইরি!! সেদিন রোববার, বাড়িতে পার্টি ছিল, দুপুরের খাওয়া দাওয়া মদ্যপান ইত্যাদি তুঙ্গে, তারমধ্যে আলমারি খুলে কয়েকটা নতুন শাড়ী বন্ধুদের দেখাচ্ছিল পিয়া। আশপাশেই শ্যামা ঘুর ঘুর করছিলো, সেটা দেখে বুলটি একবার চোখ পাকিয়ে ঈশারা ও করলো, “ওর সামনে দেখাস না”।

 

কিন্তু পিয়া তখন মাদার টেরিসা, “Oh no dear, she is very trustworthy, not like others”! তারপর বিকেলের দিকে সবাই কে চা দেবার পর শ্যামা বললো

 

“বৌদি আজ একটু বাপের বাড়ি যাবো, কাল বিকেলে আবার আসবো”, হাতে একটা ঢাউস প্লাস্টিকের ব্যাগ।

 

“আচ্ছা যা, ঘুরে আয়, রান্না অনেক বেঁচে আছে…তোর হাতে ওই ব্যাগটা তে কি রে?’ জিজ্ঞেস করে পিয়া।

 

 “ও আমার কিছু কাগজ পত্র “। শ্যামার নিষ্পাপ উত্তর।

 

পিয়া আবার বন্ধুদেরই একজনকে বলে ফেরার পথে শ্যামাকে বাজারে নামিয়ে দিতে, অত ভারী ব্যাগ নিয়ে হাঁটবে মেয়ে টা! বলাই বাহুল্য বামাল সমেত সে ই শ্যামাকে এসি গাড়ী চড়িয়ে পগার পার করিয়েছে। পরদিন আলমারি খুলে ২০ টা দামী সিল্কের অনুপস্থিতির থেকেও শ্যামার বিশ্বাসঘাতকতা তাকে কুরে কুরে খেয়েছে। দেবেশ আর শাশুড়ি মা বার বার বুঝিয়েছে(ন) যে তার মত উজবুক এ পৃথিবীতে আর দুটি নেই, ঢাউস ব্যাগটার কেন চিরুনী তল্লাশি চালায়নি সে ! ইশ, ওই সময় যদি একবার দেবেশ তাকে বুকে টেনে নিতো, মাথায় একটা হাত রাখতো,কানে ফিসফিস করে বলতো “ধুস, এটা কোনো ব্যাপারই না”……

 

উজবুকই  তো, ঠিকই তো বলে সবাই, বন্ধুরাও তাই বলে, আরে বিয়ে করলি ঠিক আছে, শরীরের চাহিদা মেটাবার একটা আইনসঙ্গত উপায় তো ভদ্র সমাজে চাই, কিন্তু তাবলে অত বড়ো চাকরিটা দুম করে ছেড়ে দিলি? আসলে মিতুন অঙ্কে বরাবরই কাঁচা, কোনো হিসেবই মেলাতে পারেনা, চেষ্টাই করেনি। ও সব নিজে নিজেই মিলে যাবে, কে ফালতু মাথা ঘামাবে ও নিয়ে। সে ভেবেছিল অনেক তো খাটলাম এবার সুন্দর একটা খেলাঘর সাজাই। দেবেশ ও বললো ,”আরে আমার কি টাকার অভাব? ঘুম থেকে উঠলে বেড টি ও পেয়ে যাবে তুমি…বাড়িতেই থাকো”। তারপর আস্তে আস্তে দিন বদলালো, ক্রেডিট কার্ড তার আছে ঠিকই, কিন্তু সব কিছুতেই একটা অদৃশ্য সীমা আঁকা আছে, অনুমতি নিয়ে সব কাজ করলেই ভালো হয়। “আরে মাথা মোটা, এইটা কিনে ফেললে? আমাকে বলবে তো? একটু মার্কেট রিসার্চ না করে কিছু কিনতে নেই, ঠকলে তো!” বলে দেবেশ , সঙ্গে ব্যাঙ্গের হাসি।

 

হুম, মিতুন তার মানে বহু রিসার্চ এরই ফসল, একেবারে দেখে শুনে সেরা গাধা টাই বাজার থেকে তুলে এনেছে দেবেশ।

 

আর এইসব বাঁকা কথা গুলোই বন্ধুরা তাকে “ইগনোর” করতে বলে… “ছেলেরা অমন বলেই থাকে একটু আধটু, সারাদিন খেটে খুটে আসে!” কিন্তু সে ও তো দেবেশের পাশের টেবিলটাতেই বসত, কই বাড়ি ফিরে কখনো কাউকে “হ্যাটা” করেনি তো?

 

নিজের কল্পনার খেলাঘরে নিজেই একটা মাটির পুতুল হয়ে যায় উজবুক মিতুন।

 

কল্যাণী ঘোষ

২৫শে এপ্রিল, ২০২০

ক্যালিফোর্নিয়া

error: Content is protected !!